অমীমাংসিত অমরাবতী

ক.
 ঘুড়ি বোধহয় গরুর সহোদর। সুযোগ পেলেই দড়ি ছিঁড়ে পালায়। গোত্তা খেয়ে খেয়ে আরও উপরে তলিয়ে যায় নীলে। ঘুড়ি কী তার জীবনকে মনে করে মনোটোনাস? তবে কেন সে এত আত্মহত্যাপ্রবণ? রাতের বেলা চুপি চুপি ফিরে এসে ঝুলে পড়ে গাছে...!

খ.
অনেকে অনেক কথা ভাবছে। বলতে পারছে না। ভাষা নেই। সুতরাং অজস্র চিন্তা অপ্রকাশিত থেকে যাচ্ছে চিরকাল। গোপন কথার ঝুড়ি নিয়ে বাজারে বসে আছে বিষন্ন সওদাগর। বাজারভর্তি মানুষ অথচ ক্রেতাহীন। সবাই ভিতরে ভিতরে এক মারাত্মক ক্রাইসিসে ভুগছে। এই খবর জানে সবাই। মুখ ফুটে বলার সাহসে কুলাচ্ছে না। এই ব্যাপারটা কোন ধরনের ইজমে পড়ে?

গ.
এক নতুন হাওয়া এসে আরেক প্রাচীন হাওয়াকে তাড়িয়ে নিয়ে গেলো। উদাহরণস্বরূপ- কাক যেমন তাড়া করে চড়ুই। উভয় পাখি গোত্রীয়। অথচ ভিতরে তারা কতো না হিংসা পুষে! হিংসা শব্দটি এখানে বেমানান। এসব দখলদারিত্বকে আমরা টেক্সট অনুসারে বলি- অস্তিত্ববাদ ও সাম্রাজ্যবাদ চর্চা।

চড়ুই বরাবর তৃতীয় বিশ্বের নাগরিক। ক্ষুদ্র গঠন। পরিশ্রমী। তাড়া খাওয়ার পরও যার রয়েছে বাঁচার উদ্যম বাসনা।

ঘ.
ফিরে এলো ডানাবাহিত রোগ। পালক গজানো মৌসুম। চঞ্চুর পরিচর্যা। বিহঙ্গ জীবন। এই ভাইরাস দারুণ সংক্রামক। জাগে কেবল উড়ার বাসনা। হাতকে বানিয়ে ডানা মেলে দাও হাওয়ার স্রোতে। উড়তে উড়তে পেয়ে যাবে মেঘ অধ্যুষিত এক দেশ। দেখবে বসে আছে সবাই। গোমরা মুখ। ভেতরে চাপা উত্তেজনা...

ঙ.
তাকে দেখলাম। মুদ্রিত হয়ে উড়ে আসছে। প্রথমে ভাবলাম ঘুড়ি। পরক্ষণে পাখি। তাড়া খাওয়া চড়ুই যেনো; কী দুরন্ত গতি...! উড়তে উড়তে একবার সে তাকাল নীচে। তারপর ডানা থেকে একটি পালক ছিঁড়ে উড়িয়ে দিল হাওয়ায়। পালক ভাসতে ভাসতে জুড়ে বসল হরিৎ তেঁতুল গাছটায়। তেঁতুল তখন মত্ত। হাওয়ার সাথে যুদ্ধতে ভীষণরকম ব্যস্ত। পাশে ছিল সোনালু। জানালো- যুদ্ধ নয়। খেলা। আমরা মানুষ নাকি! অনর্থ লড়ে যাবো...?

চ.
ভুলে গেছি ঘুমের গ্রামার। নির্ঘুম রাতগুলোতে প্রতিনিয়ত দেখা হয়ে যাচ্ছে এক শশ্মানচারী সন্ন্যাসী ও গোরখোদকের সাথে। বেতফলের পূর্নজন্ম বিষয়ক গল্প ফেঁদে কব্জিতে বেঁধে দিচ্ছে রক্ষাকবচ আর বলছে মানুষই একমাত্র বহুল প্রচারিত-জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ- সংস্করণের পর সংস্করণ হয়ে চলেছে ক্রমাগত। আর নিজের মুদ্রণযন্ত্রে জং ধরে গেলে খাটিয়ায় শুয়ে পড়ছে আতর ধূপ জ্বালিয়ে।
 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন